ভারতের তৃণমূল স্তরের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েক। তাঁর ব্যতিক্রমী শিক্ষণ পদ্ধতির জন্য “টিচার অফ দ্য স্ট্রীটস” ও “হিউম্যান ব্ল্যাকবোর্ড” নামে পরিচিত এই শিক্ষক মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি পেঙ্গুসিকান সুলতান ইদ্রিস (UPSI)-এ গ্লোবাল এডুকেটর অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ (অ্যাভা-গার্দ শিক্ষক পুরস্কার) জিতেছেন। ভারত ৫৭টি দেশের মধ্যে এই বিভাগে বিশ্বজুড়ে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।
নায়েকের এই অভাবনীয় সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর উদ্ভাবনী রাস্টার মাস্টার ত্রি-প্রজন্মীয় শিক্ষণ মডেল (3GLM)। এই মডেল গ্রামের রাস্তা ও মাটির দেয়ালকে ক্লাসরুমে পরিণত করে শিশু, বাবা-মা এবং দাদু-ঠাকুমা-কে একসঙ্গে শেখার সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে আন্তঃপ্রজন্মীয় শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা এবং আজীবন শিক্ষাকে তিনি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিয়েছেন। এই মডেল শুধু নিরক্ষরতা দূর করছে না, বরং সামগ্রিক বিকাশ এবং বিশ্ব শান্তির স্বপ্নও বুনছে।
২০২৫ সালের ৪ঠা অক্টোবর মালয়েশিয়ায় আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে দীপ নারায়ণ নায়েককে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অংশ হিসেবে তিনি অমবক লাউত ট্রফি এবং শিক্ষামূলক গবেষণা ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫,০০০ মার্কিন ডলারের গবেষণা অনুদান পেয়েছেন। এই সাফল্যের পর রাস্টার মাস্টার (ভারত) এবং UPSI (মালয়েশিয়া)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াবে।
জামুরিয়া নামোপাড়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নায়েকের ডোরস্টেপ এডুকেশন মডেল ভারত ও বাংলাদেশের ১০০টিরও বেশি গ্রামের ২০,০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে। এর আগে তিনি গ্লোবাল টিচার প্রাইজ ২০২৩ (শীর্ষ ১০ ফাইনালিস্ট) সহ একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেছেন।
সর্বোপরি বলা যায়, নায়েকের এই অর্জন প্রমাণ করে যে বাংলার গ্রাসরুটস মডেল বিশ্বব্যাপী শিক্ষাগত পরিকল্পনার কেন্দ্রে আসতে পারে।
-অঙ্কিতা পাল