হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করল কলকাতার বিএম বিরলা হার্ট হাসপাতাল। পূর্ব ভারতে প্রথমবার সফলভাবে স্থাপন করা হল বিশ্বের অত্যাধুনিক ডুয়াল চেম্বার লিডলেস পেসমেকার (AVEIR)। এত বড় সাফল্যে শুধুমাত্র বিএম বিরলা হার্ট হাসপাতালের জন্যই নয়, দেশের সামগ্রিক কার্ডিয়াক চিকিৎসায়ও বেশ বড় পদক্ষেপ।
এই যুগান্তকারী অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের পরিচালক ডা. অনিল মিশ্র। তিনি জানান, "এটি হৃদরোগ চিকিৎসায় এক নতুন যুগের সূচনা। AVEIR সিস্টেম রোগীদের দ্রুত আরোগ্য, নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা দেবে।"
এই নতুন AVEIR পেসমেকারের বিশেষত্ব হলো, এটি দেখতে ভিটামিন ক্যাপসুলের মতো, যা অস্ত্রোপচার ছাড়াই সরাসরি শিরার মধ্যে দিয়ে হার্টে স্থাপন করানো হয়। এর ফলে কোনো কাটাছেঁড়াও হয় না, দৃশ্যমান দাগও থাকে না। এতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সংক্রমণও অনেকাংশে কম হয়।
আরও জানা গেছে, ডিভাইসটির প্রায় ১৮ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি ও উন্নতমানের সুরক্ষা প্রদান করে। এটি সিঙ্গেল-ডুয়াল দু'ধরনের চেম্বার মডেলে পাওয়া যায়। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকেরা বেছে নিতে পারেন।
৮ই অক্টোবর বিএম বিরলা হার্ট হাসপাতালে প্রথম AVEIR নিয়ে সর্বসমক্ষে একটু ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। ওই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাইরাস আডেল হাদাদি। হাদাদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের MedStar Heart & Vascular Institute-এর সহযোগী পরিচালক। ইভেন্টে তিনি লিডলেস পেসমেকারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। হাদাদি জানান, দেশের রোগীদের জন্য এই AVEIR বিশ্বমানের নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ নিয়ে আসবে। এই সাফল্যকে ভারতীয় কার্ডিয়াক বিজ্ঞানের এক বড় পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বি এম বিড়লা হার্ট হাসপাতাল কার্ডিওলজি এবং কার্ডিয়াক সার্জারির চিকিৎসা ও গবেষণার ইতিহাসে অনেক মাইফলক গড়েছে। তারাই ভারতের প্রথম NABH স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হাসপাতাল। দীর্ঘ ৫৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা কলকাতার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও দেশে প্রথম কী-হোল হার্ট সার্জারি, কব্জি থেকে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, ৯ দিনের শিশুর ওপেন-হার্ট সার্জারি সহ গবেষণার আরও অনেক নজির গড়েছে বি এম বিড়লা। তাদের এই নয়া সাফল্যও শুধু কলকাতাই নয় বরং গোটা দেশের রোগীদের জন্যও উন্নত এবং নিরাপদ হৃদরোগ চিকিৎসার সুযোগ করে দেবে।
-দিশা দাস