আজ আবার কলকাতা শহর কেঁপে উঠল এক মর্মান্তিক ঘটনায়। সকালের ব্যস্ত সময়ে, মানুষের ভিড় আর উৎসবের আবহে, হঠাৎই নেমে এল মৃত্যুর ছায়া। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বদলে গেল সবকিছু। একটি দোকানের সামনে জমে থাকা জল, আর সেই দোকানের শাটার,দুটো জিনিস মিলে ঘটল ভয়ঙ্কর বিপদ।
আরও পড়ুন নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি, দশমীতে বিশেষ সতর্কতা
বেহালা-সরশুনার ক্ষুদিরাম পল্লির তালপুকুর রোডে থাকতেন ৬৫ বছর বয়সি শ্রাবন্তী দেবী। শনিবার ভোরে তিনি প্রতিদিনের মতো দোকান খুলতে বেরিয়েছিলেন। রাস্তার উপর জল জমে ছিল, আর সেই জলে দাঁড়িয়ে তিনি হাত দিলেন দোকানের ধাতব শাটারে। এক মুহূর্তে ঘটে গেল অঘটন। তাঁর শরীর কেঁপে উঠল বিদ্যুতের তীব্র আঘাতে। চোখের সামনে সবাই অবাক হয়ে দেখল, কীভাবে স্রেফ দোকান খোলার চেষ্টাতেই শেষ হয়ে গেল একটি জীবন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেন। খবর যায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র কাছেও। বৃদ্ধাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা আর কিছু করতে পারলেন না। হাসপাতালেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সিইএসসি জানিয়েছে, দোকানের টিনের ছাদের শেডে একটি বৈদ্যুতিক আলো লাগানো ছিল। সেই আলোর তার ঠিকভাবে বাঁধা ছিল না। তার থেকেই লিক হয়ে বিদ্যুৎ চলে আসে দোকানের শাটারে। রাস্তার জমা জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে শাটারে হাত দেওয়াতেই তড়িৎ প্রবাহ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই প্রাণ হারালেন শ্রাবন্তী দেবী।
এই ঘটনার আগে শহরেই ঘটেছে আরও বেশ কিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন মানুষ। নেতাজিনগরে এক ফলবিক্রেতা জমা জলে দাঁড়িয়ে লাইটপোস্টে হাত দিতেই মারা যান। সেই ঘটনাতেই প্রাণ দিয়েছিল একটি কুকুরও। সামাজিক মাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরে।
কিন্তু সেই ভয় কাটতে না কাটতেই ফের ঘটল এক মর্মান্তিক পুনরাবৃত্তি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এখনও জল জমে আছে। মানুষ বাধ্য হয়ে সেই জল পার হয়ে যাতায়াত করছেন। এমন পরিস্থিতিতে কোথায়, কখন বিদ্যুতের সংস্পর্শে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তা বোঝা প্রায় অসম্ভব।
শ্রাবন্তী দেবীর মৃত্যু আবারও প্রমাণ করল, কলকাতার জমা জল আর অসতর্ক বৈদ্যুতিক সংযোগ মিলেই এক মারণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। উৎসবের মরসুমে শহর যখন আলোয় ঝলমল করতে চাইছে, তখনই বিদ্যুতের এই অন্ধকার দিক কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ।
-জ্যোতি সরকার